একটি মোবাইলের জন্য প্রাণ গেল ৪ জনের!
অনলাইন ডেস্ক
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টয়লেটে পড়ে যাওয়া একটি মোবাইল ফোন সেপটিক ট্যাংক থেকে তুলতে গিয়ে একে একে চার চা শ্রমিকের প্রাণ গেছে বলে জানা গেছে। তবে পুলিশ বলছে, টয়লেটটি ভাঙ্গাচোরা হওয়ায় একজন সেখানে পড়ে যান। পরে তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে একে একে বাকিরাও ট্যাংকের বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন।
বুধবার (৯ জুলাই) দিবাগত রাতে উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের হরিণছড়া চা বাগানের শ্রমিক লাইনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সহকারী পুলিশ সুপার ও ইউএনও। তারা নিহত ও আহত পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন। এছাড়া জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
নিহতদের মধ্যে দু’জন আপন ভাই। তারা হলেন হরিনছড়া চা বাগানের উদয় নায়েকের ছেলে রানা নায়ক (১৭) ও শ্রাবণ নায়েক (১৯)। অপর দু’জন হলেন একই এলাকার জোহরা রবি দাসের ছেলে কৃষ্ণ রবি দাস (২০) ও লক্ষীনন্দ ফুলমালির ছেলে নিপেন ফুলমালি (২৭)। তারা সবাই হরিণছড়া চা বাগানে চা শ্রমিকের কাজ করতেন।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন আরো একজন। তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহত ব্যক্তির নাম রবি বুনার্জী (২০)। প্রথমে তাকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শ্রীমঙ্গর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আমিনুল ইসলাম জানান, লাশগুলো হাসপাতালের মর্গে আছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তার করা হবে।
সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) মো: আনিসুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গণমাধ্যমকে জানান, ‘হরিণছড়া চা বাগানের লেবার কলোনিতে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তা কারোরই কাম্য ছিল না। প্রথমে একজন বুধরাত রাতে ওয়াশরুমে যান। এটি পুরাতন ভাঙ্গাচোরা ওয়াশরুম থাকায় তিনি সেপটিক ট্যাংকিতে পড়ে যান। আমাদের ধারণা সেখানে বিষক্রিয়া ছিল। তাই তিনি একসময় অচেতন হয়ে যান। তাকে উদ্ধারের জন্য যিনি গিয়েছেন তিনিও অচেতন হয়ে যান। এভাবে চারজন ব্যক্তি নেমে অচেতন হয়ে যাওয়ার পরে প্রতিবেশীরা তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।’
তিনি আরো বলেন, ‘নিহতের পরিবার ও পঞ্চায়েত কমিটির সাথে কথা বলছি। তাদের কোনো অভিযোগ নেই, তারপরও আমরা তদন্ত করছি। পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া শেষ করে আমরা লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করব।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর কথা সকালে শুনে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের পক্ষ থেকে কিছু মানবিক সাহায্য প্রদান করেছি।’
এদিকে, হরিণছড়া চা বাগানের বাসিন্দা ও রাজঘাট ইউপি সদস্য অজয় ভৌমিক জানান, ‘রানা নায়েকের হাত থেকে একটি মোবাইল ফোন সেপটিক ট্যাংকে পড়ে গেলে সেটি তুলতে সে ট্যাংকে নামে। নামার সাথে সাথেই রানা অচেতন হয়ে পড়ে। তাকে উদ্ধারে তার বড় ভাই শ্রাবন নায়েক নিচে নামলে সেও একইভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এরপর একে একে কৃষ্ণ রবি দাশ ও নিপেন ফুলমালি নিচে নামে উদ্ধার করতে। তারাও ট্যাংকের বিষাক্ত গ্যাসে অচেতন হয়ে পড়ে। পরে আশপাশের লোকদের চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান প্রতিবেশীরা। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান তারা।’
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা: সব্যসাচী পাল তমাল জানান, ‘বুধবার মধ্যরাতে পাঁচজনকে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই চারজনের মৃত্যু হয়। অপর একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে থানা পুলিশ জানায়, বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার হরিণছড়া চা বাগানে উদয় নায়েকের ছেলে শ্রাবন নায়েক সেপটিক ট্যাংকে পড়ে গেলে তার ভাই রানা নায়েক তাকে উদ্ধার করতে গেলে সে-ও ট্যাংকে পড়ে যায়। এরপর তাদের উদ্ধার করতে নিপেন ফুলমালি ও কৃষ্ণ রবি দাস গেলে তারাও পড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

No comments: